বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করা হলো বছরের শুরুর দিন। অর্থাৎ ২০২১ সালের পয়লা জানুয়ারি। এই দিনে পৃথিবীর জন্য খুলবে নতুন অধ্যায়। সেইসঙ্গে খুলবে এমাজ উদ্দিন চৌধুরীর জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়।

প্রথম অধ্যায়টি ছিলো বাবা, মা, ভাই আর বোনকে নিয়ে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে তার সঙ্গে যোগ হচ্ছেন আরো একজন।

‘যোগ হওয়া’র এই দিনটি সবার জন্যই বিশেষ। এমাজ উদ্দিন চৌধুরীর জন্যও তা-ই। তার বাবা এলান উদ্দিন চৌধুরীও এমন একটি দিনের অপেক্ষায়।

এমাজ উদ্দিন একটি বেসরকারি চাকরি করেন। বাবা ব্যবসায়ী। দুই ভাই আর এক বোনের মধ্যে তার অবস্থান মাঝামাঝি। বড় ভাই থাকেন লন্ডন। আর ছোট বোন তাদের সঙ্গেই।

বিয়ের অনুষ্ঠানটা বড় ভাইকে ছাড়াই করতে হচ্ছে তাদের, এই প্রতিবেদককে জানালেন এমাজ উদ্দিন।

কেন?

‘লন্ডনে নতুন করোনা ভাইরাসের প্রকোপ হওয়ায় তিনি আসতে পারছেন না। অথচ তার জন্যই আমরা বিয়ের লম্বা তারিখ দিয়েছিলাম।’ বললেন তিনি।

তার বাবা বললেন, ‘বড় ছেলের উপস্থিতি ছাড়া অনুষ্ঠান করে আনন্দ পাচ্ছি না। তবে এখন তো আর করার কিছু নেই। সব আয়োজন হয়ে গেছে।’

কেমন চলছে আয়োজন?

এই প্রতিবেদনটি সে বিষয়কে কেন্দ্র করেই।

রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রীতে এলান উদ্দিন চৌধুরীর নিজস্ব বাড়ি। বিয়ের মাসখানেক আগে থেকেই ঝার-মুছ শুরু করেছেন। ছাদ পরিষ্কার করেছেন। পয়লা জানুয়ারি বরযাত্রা করবে। একটি কমিউনিটি সেন্টারে বউভাত হবে। আর গায়েহলুদ হবে নিজের বাড়ির ছাদে।

৩০ ডিসেম্বর ২০২০, সকাল থেকেই চলছে হলুদের ধুমধাম আয়োজন। বাড়ির সামনে দেখা গেছে সুদৃশ্য তোরণ। পুরো বাড়ি সাজানো হয়েছে ঝলমলে বাতি দিয়ে। ছাদের ওপর প্যান্ডেল। সব দায়িত্ব নিয়েছে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। আর বিষয়গুলো তদারকি করছেন স্বয়ং বরের বাবা।

বাড়ির নিচতলায়, গ্যারেজের জায়গাটুকুতে বসানো হয়েছে রান্নার আয়োজন। বাবুর্চিরা ব্যস্ত। বাড়িভর্তি আত্মীয় ও শুভানুধ্যায়ী। ছেলে-বুড়ো মিলে রইরই অবস্থা।

wedding
পরিবার, আত্মীয় ও শুভানুধ্যায়ীরা এই দিনটিতে ভাসতে চান উজ্জ্বল আনন্দে। ছবি : ট্রাফেলাইফ

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, সেইসঙ্গে তৈরি হচ্ছে পুরো বাড়ি। একসঙ্গে জ্বলে উঠলো মরিচবাতি। ছাদের ওপর সরব হলো ‘সাউন্ড সিস্টেম’। রাত একটু গড়ালেই শুরু হবে ডিজে পার্টি।

না, গায়েহলুদের পুরনো রীতি এখন ওভাবে নেই। কেবল শহর বলে নয়, গ্রাম থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে পুরনো প্রথা। হলুদবাটি নিয়ে বর বা কনেকে ঘিরে বিয়ের গান গাওয়ার মতো সাদামাটা আয়োজন এখন হয় না!
হয় না, কথাটা ঠিক নয়। হলেও তাতে জৌলুশ থাকে না বলেই অনেকের ধারণা।

জীবনের একটি অধ্যায়ের শুরু যেখানে হবে, সেটা জৌলুশহীন হোক এমনটা চান না অনেকেই।

এলান উদ্দিন চৌধুরীও চান না, তার ছেলের বিয়েটা সাদামাটা হোক।

রাত গড়ালো, সেইসঙ্গে বাড়তে থাকলো বিয়েবাড়ির জৌলুশ। মরিচবাতির ঝালর যেমন করে মিটমিট করে তেমন করেই শুরু হলো বুক ধুকধুক গান। হিন্দি ভাষার গান। সাথে ইংরেজির মিশেল। সেইসাথে আছে বাংলাও।

রাত ঘন হচ্ছে। আর বাড়ছে প্যান্ডেলের উত্তাপ। পরিবার, আত্মীয় ও শুভানুধ্যায়ীরা এই দিনটিতে ভাসতে চান উজ্জ্বল আনন্দে। প্যান্ডেলের একদিকে ‘সাউন্ড সিস্টেম’। রাখা আছে আলো ছুঁড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা। ঝলমলে আলোতে ঝিকমিক করছে জলসা। বুকে কাঁপুনি তুলে বাজছে গান। আর সাগরের ঢেউয়ের মতো করে ছন্দ তুলছেন সমাগতরা। সেখানে বর এমাজ উদ্দিন চৌধুরী এবং তার বাবা এলান উদ্দিন চৌধুরী একাকার।

অনুষ্ঠানটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন

ইংরেজিতে পড়তে ক্লিক করুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here