স্বপ্নের উপত্যকায় কল্পনাবিলাস

প্রকৃতির কন্যা হাসির গল্প

দারুণ একটা সকাল কল্পনা করুন। এতটুকু কল্পনা আপনাকে এনে দিতে পারে প্রশান্তি। ধরুন রাতের অন্ধকার তখন সরে যাচ্ছে। বেরিয়ে এসেছে লাল আলো। আলোর নিচে মেঘালয়ের গারো পাহাড়। তারপর পাহাড়ের সবুজ। সবুজ পাহাড়ে এক স্বপ্নের উপত্যকা। শিশিরভেজা দুর্বাঘাস চিক চিক করছে। কুয়াশা আর শিশিরের দাপট। আপনি ওই উপত্যকায় আছেন, শীতে কাবু। কাঁপছেন থরো থরো। চাদর দিয়ে ঢাকা সারা শরীর। বসে আছেন, জবুথবু, খালি পায়ে। পায়ে লেগে আছে ভেজা দুর্বা। চাদরের ভেতর থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে এসেছে আপনার চেহারা। তখনো দাঁতে দাঁত চেপে কাঁপছেন আপনি।

Morning at lengura, garo hills
সবুজ পাহাড়ে এক স্বপ্নের উপত্যকা। শিশিরভেজা দুর্বাঘাস চিক চিক করছে। কুয়াশা আর শিশিরের দাপট। আপনি ওই উপত্যকায় আছেন, শীতে কাবু। মডেল : মো. আল আমিন। ছবি : আনন্দ সরকার, ট্রাভেলাইফ

হঠাৎ আপনার দৃষ্টিতে বিস্ফোরণ।
শীতল প্রকৃতি যেন উষ্ণ হয়ে উঠছে।
নতুন আলোর ঝিলিক লেগেছে চোখে।

ঠিক ওই সময় বাতাস থেকে কেউ গাইলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান-

বঁধু, কোন আলো লাগল চোখে!
বুঝি দীপ্তিরূপে ছিলে সূর্যলোকে!
ছিল মন তোমারি প্রতীক্ষা করি
যুগে যুগে দিন রাত্রি ধরি-

গানের আগেই উপত্যকায় দেখা গেলো এক পাহাড়ি মেয়েকে। উচ্ছ্বল, তরল। এই মেয়েটা প্রকৃতিতে এনে দিলো উচ্ছ্বাস, হাসি। তাই প্রকৃতির এই কন্যাকে ডাকা যেতে পারে ‘হাসি’ বলে।

green of garo hills, Lengura
হাসি যখন হাঁটে, প্রকৃতি তখন মুক্তো ঝরায়। মডেল : ফাংশ্রী (ফাতেমা) রংদী। ছবি : আনন্দ সরকার, ট্রাভেলাইফ

প্রকৃতির কন্যা হাসি। প্রকৃতিতে বিচরণ করছে। আর গাইছে-

ভেঙে মোর ঘরের চাবি
নিয়ে যাবি কে আমারে-

হাসি হরিণীর মতো চঞ্চল। মাথার চুল বাতাসে ভাসিয়ে ছুটে। বনের পথ ধরে দৌড়ায়। পালিয়ে যায় সবুজের আড়ালে। আবার বেরিয়ে আসে। আর বাতাসে বাজে গান-

মায়াবন বিহারিনী হরিণী,
গহন স্বপন সঞ্চারিণী,
কেন তারে ধরিবারে করি পণ
অকারণ-

হাসি উঁচু এক ঘাসের বনে যায়। একছড়া ঘাসফুল ছিঁড়ে হাতে নেয়। কপাল কুঁচকে, মাথা নুইয়ে আনমনা ঘাসফুল ছিঁড়তে থাকে। হাসি যখন হাঁটে, প্রকৃতি তখন মুক্তো ঝরায়।

আমাদের হাসির মনে কি মেঘ ডাকে না?

beautiful garo girl at lengura, kalmakanda, durgapur, garo hills
হাসি হরিণীর মতো চঞ্চল। মডেল : ফাংশ্রী (ফাতেমা) রংদী। ছবি : আনন্দ সরকার, ট্রাভেলাইফ

হাসি জলের কাছে যায়। জলের ভেতর তার ছবির প্রতিফলন হয়। জলে পা ভেজায়। জলের ভেতর আলোড়ন উঠে। ফুলের গন্ধ নেয়। এবং হাসে।

বিকেল গড়িয়ে যায়। সন্ধ্যা নামে। হাসি এবার ঘরে ফিরবে। একটু দূরে হাসির বাড়ি দেখা যায়। ওদিকেই হাঁটতে থাকে। বাতাস তখন গায় রবীন্দ্রনাথের আরো একটি গান-

আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে
একতারাটির একটি তারে গানের বেদন বইতে নারে-

কল্পনাবিলাসের পর ঘুরে আসতে পারেন ওপরের ফিচারড ভিডিও থেকে। মিলিয়ে দেখুন, আপনার কল্পনা আর এই ভিডিওর মধ্যে ফারাক কতটুকু।

ইংরেজিতে পড়তে ক্লিক করুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here