পাহাড়ি পালা সেরেনজিং

গারো পাহাড়ের গল্প

এই গল্পটা উঠে এসেছে গহীন অরণ্য থেকে। যে অরণ্য তৈরি করেছিলেন তাতারা রাবুগা। সেই অরণ্য এখন আর গহীন নেই। অরণ্যে যাদের বসতি তাদের কাছে রাবুগার সাজানো বাগান আগের মতো নেই। তিনি এই বাগানে পুতুলের মতো করে ছেড়ে দিয়েছিলেন পাহাড়িদের।

এই পাহাড়ের নাম গারো পাহাড়। ভারতের মেঘালয় থেকে ঢাল বেয়ে নেমে এসেছে বাংলাদেশে। এই পাহাড়ে যাদের বসতি তাদেরকে ডাকা হয় গারো। গারোরা বিশ্বাস করেন তাতারা রাবুগা তাদের দিয়েছেন হাসি, আনন্দ আর উচ্ছ্বলতা। সংস্কৃতি, কথা বলার ভাষা। গারোরা বলেন ‘আচিক’ ভাষা।

হাসি আর কান্না মিলেই মানুষ। শহুরে জীবনে যেমন হাসি থাকে, তেমন আছে পাহাড়েও। অট্রালিকার ভেতর যেমন কান্না থাকে, তেমন থাকে পাহাড়েও। পাহাড়িদের হাসি আর কান্নার নাম ‘সেরেনজিং’। এটি গারোদের লোককাহিনী। আচিক ভাষায় পালা গান। বলা যায় একটি প্রেমের উপাখ্যান। গারোদের যাপিত জীবনের ছবি। রোমাঞ্চকর আলো আর অন্ধকার।

Sereging at Garo hills, lengura, kalmakanda
নায়িকার নাম সেরেনজিং। পালার নামও তার নামেই। মডেল : ফাংশ্রী (ফাতেমা) রংদী। ছবি : আনন্দ সরকার, ট্রাভেলাইফ

‘সেরেনজিং’ এক গারো মেয়ের নাম। সে এই পালার নায়িকা। গারোরা বিশ্বাস করেন, এই পালা তৈরি করেছেন স্বয়ং তাতারা রাবুগা। পাহাড়িদের জীবন জড়ো করে তিনি ঢুকিয়ে দিয়েছেন ‘সেরেনজিং’-এর ভেতর। সেরেনজিং এর চিত্রনাট্যও করেছেন তাতারা রাবুগা। এর শিল্প নির্দেশক এবং পরিচালকও তিনি।

নায়িকার নাম সেরেনজিং। পালার নামও তার নামেই। নায়িকার বোনের নাম সেরেনি। গারোদের ওয়ানগালা উৎসবে দুই বোনের এই কাহিনী উপস্থাপন হয়। এর ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে জীবন। সেরেনজিংয়ের গল্প একেক এলাকায় একেকভাবে উপস্থাপন হয়।

সেরেনজিং আর সেরেনির বাবা-মায়ের বসতি ছিলো তিব্বতে। তিব্বত থেকে তাদের একটি দল আসে গারো পাহাড়ে। এখানে যে যার মতো ছড়িয়ে যায়। সেরেনজিংয়ের বাবার নাম সলনারাং। আর মায়ের নাম চিনারাং। গারো পাহাড়ে এসেই এদের কোলজুড়ে আসে সেরেনজিং। কিন্তু একদিন জমিতে কাজ করতে গিয়ে বাবা অসুস্থ হয়ে যান। বাড়ি ফেরার পর তার মৃত্যু হয়। শোক সইতে না পেরে কয়েকদিন পর মা চিনারাংয়ের মৃত্যু হয়।

সেরেনজিংয়ের পরের গল্প নোরেং মাসির বাড়িতে। এখানেই বড় হয় দুই বোন। নোরেং মাসির ঘরের কাজ করে। পাহাড়ে চাষ করতে যায়। সন্ধ্যায় ঘরে ফেরে। আর সেরেনজিং ও সেরেনি বড় হতে থাকে।

পাহাড়ি পালা সেরেনজিং নিয়ে তথ্যগল্প তৈরি করেছে ট্রাভেলাইফ। গল্পগুলো পরিচালনা করেছেন মশিউর রহমান কায়েস। প্রযোজনা করেছেন আহসান সজিব। এতে সেরেনজিং চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফাংশ্রী (ফাতেমা) রংদী। সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন আনন্দ সরকার।

সেরেনজিংকে আরো জানতে পড়ুন : পাহাড়ে প্রণয়ের গল্প

ইংরেজিতে পড়তে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here